• شروق الشمس عند: 5:23 صباحًا
  • غروب الشمس عند: 6:28 مساءً
info@talimeislam.com +88 01975539999

তারানায়ে জান্নাত সংক্ষিপ্ত আলোচনা

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) কর্তৃক লিখিত গ্রন্থসমূহের পরিচিতি ও পর্যালোচনাঃ

যুগে যুগে যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক দিকপালগণ তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে যুগ থেকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় গাড়োমী বিদুরিত করেছেন। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি অধ্যাপক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেবের আল কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর আলোকে গবেষণামূলক, আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখনীর ক্ষেত্রেও। মাওলানা সাহেবের লেখনীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি আল-কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর বিধানকে বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে বিজ্ঞানের নির্যাস দিয়ে সুরভী ছড়িয়েছেন। যা সকল ধর্মের মানুষের নিকট সাদরে গৃহীত হয়েছে। আমরা এ অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী রহ. সাহেব তাঁর জীবদ্দশায় নিম্নলিখিত আটখানা কিতাব রচনা করেন; যা তাঁর সুযোগ্য সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা মুফতি ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব কর্তৃক প্রকাশিত হয়।

১. বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা

২. তারানায়ে জান্নাত

৩. মহাস্বপ্ন।

৪. জীবন রহস্য ও দেহতত্ত্ব।

৫. মা’রেফতের ভেদতত্ত্ব

৬. ধূম পিপাসা সর্বনাশা

৭. মহা ভাবনা

৮. পীর ধরার অকাট্য দলিল

 

 নিম্নে গ্রন্থ সমূহের বিস্তারিত পরিচিতি ও পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলে

২. তারানায়ে জান্নাত

সংক্ষিপ্ত আলোচনা

অধ্যাপক সিদ্দিকী সাহেব (রহ.) ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে আশিকিন, যাকিরিন, সালিকিনের সাধনার দুই প্রকার কাম্য বস্তু তথা আধ্যাত্মিক জগতের গূঢ় তত্ত্ব সন্নিবিষ্ট করে উপহার দেন তারানায়ে জান্নাত’ নামক কিতাবটি।

‘তারানায়ে জান্নাত বা বিহিশতী সুর’ কিতাবের পরতে পরতে তাঁর কবি প্রতিভা সূধী পাঠক মহলের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। আল্লাহ প্রেমিক মহাসাধক

মাওলানা সাহেব এ কিতাবে বলেন-

“ওগো খোদা তুই রহমান রাহিম

তুমি সৃজিয়াছ মহাবিশ্ব

আমি দীন হীন নিঃস্ব

তবু আমারি মাঝে তোমারি বিকাশ

অনুতে বিরাজ তুমি হইয়া অসীম৷”

 

উপরের কয়েকটি পংক্তি থেকে মাওলানা সাহেবের মহাজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দুটি মহাপরিচয় ‘মহাদয়ালু ও‘মহাবিশ্বের মহাসৃষ্টিকতা’ ফুটে উঠেছে এবং অতি ক্ষুদে মানুষের ‘ইলম তাসাওউফ ও ইলম মা’রিফাত অর্জন এবং অসীম মহান আল্লাহ রাব্দুল

আ’লামীনের মহাক্ষমতা তুলে ধরেছেন। অসীম মহাস্রষ্টার বিশালতা সম্পর্কে তিনি‘মহা ভাবনা’ নামক একটি কিতাব রচনা করেছেন, যা আমরা সংশ্লিষ্ট অংশে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তারানায়ে জান্নাত’ কিতাবটি দুটি খণ্ডে রচিত হয়েছে। জানা যায়, তিনি ১৯৭৭ খিস্টাব্দ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফরকালে ১০৭টি আধ্যাত্মিক গজল রচনা করেন। প্রায় প্রতিটি গজলে তিনি রচনাকাল ও রচনাস্থান উল্লেখ করেছেন যা তার উচ্চপর্যায়ের বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে এবং আমাদের গবেষণাকে অনেকাংশে সহজ করেছে।

মাওলানা সাহেব তাঁর মুর্শিদ কিবলাকে অত্যধিক ভালবাসতেন তিনি তাঁর স্মরণে

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ১৮ই জানুয়ারি জামসা যাওয়ার পথে লিখেন-

‘কে যাও পথিক মোর্শেদেরে কইও খবর

আছি বনবাসে

কেমন করে ঘরে আছে আমায় রেখে পরবাসে।।

আর কাছে আসিব না

আর ভালবাসিব না

মিনতি লইয়া আর দাঁড়াব না পাশে।।

 

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারী “ইলম মা’রিফাত সম্পর্কে লিখেন-

“ফানা ফিশ শায়েখ হবে যদি

সবক কর নিরবধি

সকল দুঃখে কোমর বাঁধি থাক পীরের পায়।।

ফানা ফিল্লাহ হতে হলে

আপন বুদ্ধি দাওরে ছেড়ে

মোর্শেদ বাণী মালা করে রাখিও গলায়৷।।”

 উপরের পংক্তিগুলো ‘ইলম মা’রিফাত জগতের অতি উচ্চ পর্যায়ে হওয়ায় আমাদের অতি নগণ্য জ্ঞানে এ বিষয়ে আলোচনা করা খুবই কঠিন। তবে এতটুকু অনুধাবন করা গেল যে, ফানা ফিশ শায়েখ’ ও ‘ফানা ফিল্লাহ’ ইত্যাদি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে তাকে অবশ্যই তার মুর্শিদ বা পীরের প্রতি একনিষ্ঠ ভালবাসা থাকা প্রয়োজন। ফানা ফিশ শায়েখ অর্থে সালিক শায়িখে ফানা ও‘ফানা ফিল্লাহ অর্থে সালিক মহান আল্লাহ’য় ফানা’ বুঝায়।

এ কিতাবে এমন কিছু গজল রয়েছে যা শুধু উচ্চ পর্যায়ের সালিকদের আধ্যাত্মিক বিষয়, সাধারণ মানুষের জ্ঞানের অনেক উর্ধ্বে। যেমন- মাওলানা সাহেব ৩০ মে

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে লিখেন-

“আশা ছিল নিরালাতে পাব তোমায়

নূরের বাহু মেলে তুমি জড়াবে গায়।।

তুমি শুধু হাসবে

আমায় ভালবাসবে

দেখব আমি জ্বলবে তুমি নূরের বিভায়।।

একাই শুধু হাসবে।

একাই ভালবাসবে।

একাই তুমি আমি হবে নিজ মহিমায়।।

আমি শুধু দেখবই

তাকিয়ে শুধু থাকবই

হারিয়ে নিবে আমার সকল তোমার হিয়ায়।।

আমি শুধু কাঁদবই।

তোমায় শুধু সাধবই

আমি শুধু বিলিয়ে যাবই

তোমার রাঙ্গা ঐ দুটি পায়।।

 

 সারকথা

এ কিতাবটির পরতে পরতে মাওলানা সাহেবের ‘কবি’ পরিচয়টি ফুটে উঠেছে। এ কিতাব স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘মহাকাব্য শাহনামা’র’ লেখক মহাকবি ফিরদৌস,‘গুলিস্তা’র’ লেখক আল্লামা শেখ সা’দী (রহ.) এবং মসনবী শরীফের’ লেখক মহাকবি মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহ.)-এর মত মুসলিম মহাকবিদের তাসাউফের অমর কীর্তির কথা ।

নামকরণের সার্থকতা।

যেভাবে আতরের দোকানে আতরের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, মাছের বাজারে মাছের গন্ধ পাওয়া যায়, ফুলের বাগানে ফুলের ঘ্রাণ পাওয়া যায়, জ্ঞানী মানুষের কাছে গেলে জ্ঞান আহরোণ করা যায়, ভদ্র মানুষের নিকট দ্রতা শেখা যায়, সংগীত শিল্পীর নিকট গেলে সুর শোনা যায়, আল্লাহর ওলীদের নিকট গেলে আল্লাহর কথা মনে হয় ঠিক একই ভাবে তারানায়ে জান্নাত বা বিহিশতী সুর’ নামক কিতাবটি পাঠ করলে বা মাওলানা সাহেবের স্ব-সুরে শ্রবণ করলে নিজের অজান্তেই চোখের অশ্রু ধরে রাখা যায় না, জান্নাতী স্পর্শ অনুভূত হয়। তাই কিতাবটির নামকরণ‘তারানায়ে জান্নাত বা বেহেশতী সুর’ যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে।

প্রচ্ছদ পরিচিতি

কিতাবটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনাটি করেন কিতাবটির প্রকাশক, মাওলানা সাহেবের বড় সহেবজাদা ও প্রধান খলিফা ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী। পরিকল্পনাটিতে, একটি নূর থেকে অসংখ্য নূরের রশ্মি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, অসংখ্য রশ্মি থেকে অসংখ্য নূর বলতে তাসাওউফের নূর, মা’রিফাতের নূর, হুব্বে রাসূলের নূর, হুল্লুল্লাহ’র নূর, হুব্বে র্শদের নূরকে বুঝানো হয়েছে। প্রকৌশলী মুহাম্মাদ রিয়াজুল হক প্রকাশকের পরিকল্পনায় প্রচ্ছদটি অংকন করেছেন।

বিস্তারিত জানতে ‘‘ জীবন দর্শন ও তাসাউফ চর্চা ‘’ কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইলো।  রচনা ও সংকলন করেছেন- গবেষক মো: সেলিম-উল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব ।  যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.ফিল. ডিগ্রী লাভ করেন । 

 

 

 

Lorem Ipsum

صمم بواسطة محمد ناصر الدين

arAR