টয়লেট এ যাওয়া এবং বের হওয়ার দোয়া ও সুন্নাত (আদব)।
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় ও স্থানের জন্য যেসব দোয়া উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টয়লেটে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার দোয়া।
সুন্নত মেনে টয়লেটে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে।
টয়লেটে প্রবেশ করার দোয়া:
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মানুষকে টয়লেটে যেতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা পেশাবের প্রয়োজনে টয়লেটে প্রবেশ করার পূর্বে পড়ার জন্য উম্মতকে এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন,
اللهم انى اعوذبك من الخبث والخبائث
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খবায়েছ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ জ্বিন ও দুষ্ট নারী জ্বিনের অনিষ্ট থেকে।’ (বোখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো যে, মানুষ যেসব স্থান ও মুহূর্তের কথা মুখে আনতে লজ্জাবোধ করে, সে সময় ও স্থানের জন্যও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে কোনো না কোনো দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে এসব ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক অটুট ও দৃঢ় থাকে।
দুষ্টু মাখলুক থেকে আশ্রয়প্রার্থনা করলে লাভ কি?
উল্লেখিত দোয়া পাঠের মাধ্যমে দুষ্ট মাখলুক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এই আশ্রয় প্রার্থনার লাভ ও রহস্য সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে ইরশাদ করেন।
‘যে সব স্থানে মানুষ ইসতিনজার(প্রাকৃতিক) প্রয়োজন পুরা করার উদ্দেশ্যে যায়, এসব স্থান শয়তান চলাচলের পথ। কেননা, শয়তান সাধারণত নাপাক, নোংরা, ময়লা, আবর্জনাময় জায়গা দিয়ে চলাফেরা করে। কারণ এগুলো নোংরা ও দুষ্টু প্রাকৃতির মাখলুক। তাই এধরনের জায়গায় যাওয়ার সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে শয়তানের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। যাতে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
রাসুলের বানী দ্বারা জানা যায়, শয়তান যেমন মানুষের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে, অনুরুপ আত্মিক ক্ষতি ও করতে পারে। শারীরিক ক্ষতি যেমন তোমাদের শরীরে কিংবা কাপড়ে নাপাক কিছু লাগিয়ে রাখবে, ফলে তোমরা অপবিত্র হয়ে পড়বে। কখনো বা শয়তান কোনো অসুখ বিসুখে ফেলে দেবে, এজাতীয় বহু ঘটনা বর্নিত আছে যে, শয়তান কোনো নাপাক ও নোংরা জায়গায় মানুষের ওপর সরাসরি আক্রমন করে বসেছে ও বহুজনকে আবার মৃত্যুর মুখেও ফেলে দিয়েছে। মোটকথা, নোংরা আবর্জনার মধ্যে শয়তান মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। কোনো কোনো আলেম এও বলেছেন যে, মানবদেহের রোগ জীবানু শয়তানের দ্বারা সংক্রমিত হয়।
শয়তান মানুষের আত্মিক ক্ষতিও করতে পারে। আর তা এভাবে যে, যেসব জায়গায় শয়তান আনা গোনা করে সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষ সতর খোলা অবস্থায় থাকে। ঠিক সেই সময় শয়তান মানুষের অন্তরে বাজে চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়, অশ্লীল কামনা জাগিয়ে তোলে। ফলে মানুষের ভাব প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে মানুষ গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, একারণেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, টয়লেটে প্রবেশ করার পূর্বে তোমরা আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা কর।
কিছু করনীয় আদব(শিষ্টাচার)সুন্নাতঃ-
* বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা।
* তারপরে উপরোল্লিখিত দোআ পড়া
* পরিষ্কার হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা।
* পানি ব্যাবহারের পূর্বে টিসু বা মাটির পবিত্র ঢিলা (কুলুখ) ব্যবহার করা।
* কুলুখ,পানি না পাওয়া গেলে পায়খানা বা প্রস্রাবের পর মাটি, পাথর, ইটের কুচি ইত্যাদি দিয়ে কুলুখ করবে।
* হাড় বা শুকনো গোবর দ্বারা কুলুখ করা যাবে না।
* কাপড়ের টুকরো বা টিসু পেপার দিয়েও কুলুখ করা যায়।
* পানি পাওয়া গেলে আগে কুলুখ ব্যবহার করবে। এটার মাধ্যমে ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়।
* পুরোপুরি কাপড় উঠিয়ে (উলঙ্গ হয়ে) না বসা। এমনভাবে বসা যাতে সতর দেখা না যায়।
* টয়লেটে মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি শরীফ)
* খালি মাথায় না থাকা। টুপি, রুমাল, ওড়না বা কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে রাখা
* কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা।(বোখারী)
#টয়লেটে খালি পায়ে না যাওয়া। জুতা-সেন্ডেল পায়ে দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়া। (কানযুল উম্মাল)-
* প্রস্রাব পায়খানা দাড়িয়ে না করা (বোখারী ও মুসলিম)
* বাম হাত দ্বারা ঢিলা ও পানি ব্যবহার করা। (বুখারি)
* লজ্জাস্থান ডান হাতে স্পর্শ করবে না এবং ডান হাতে শৌচক্রিয়া করবে না।’ (মুসলিম)-
এস্তেন্জা বা শৌচকার্য করার পরে ডান পা দিয়ে বের হয়ে দোআ পড়বেঃ-
– غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ.
উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।
’অর্থ : ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য;
যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়লা আমাদের সকলকে এতটুকুর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।