• Sunrise At: 6:34 AM
  • Sunset At: 5:15 PM
info@talimeislam.com +88 01975539999

ধূম পিপাসা সর্বনাশা সংক্ষিপ্ত আলােচনা

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) কর্তৃক লিখিত

গ্রন্থসমূহের পরিচিতি ও পর্যালোচনাঃ

যুগে যুগে যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক দিকপালগণ তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে যুগ থেকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় গাড়োমী বিদুরিত করেছেন। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি অধ্যাপক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেবের আল কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর আলোকে গবেষণামূলক, আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখনীর ক্ষেত্রেও। মাওলানা সাহেবের লেখনীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি আল-কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর বিধানকে বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে বিজ্ঞানের নির্যাস দিয়ে সুরভী ছড়িয়েছেন। যা সকল ধর্মের মানুষের নিকট সাদরে গৃহীত হয়েছে। আমরা এ অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী রহ. সাহেব তাঁর জীবদ্দশায় নিম্নলিখিত আটখানা কিতাব রচনা করেন; যা তাঁর সুযোগ্য সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা মুফতি ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব কর্তৃক প্রকাশিত হয়।

১. বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা

২. তারানায়ে জান্নাত

৩. মহাস্বপ্ন।

৪. জীবন রহস্য ও দেহতত্ত্ব।

৫. মা’রেফতের ভেদতত্ত্ব

৬. ধূম পিপাসা সর্বনাশা

৭. মহা ভাবনা

৮. পীর ধরার অকাট্য দলিল

 

 নিম্নে গ্রন্থ সমূহের বিস্তারিত পরিচিতি ও পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলে

৬. ধূম পিপাসা সর্বনাশা

সংক্ষিপ্ত আলােচনা

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সমাজ থেকে মানুষের একটি কু-অভ্যাস বিদুরিত করার জন্য এ ছােট গ্রন্থটি রচনা করেন। মূল গ্রন্থটি মাত্র দশ পৃষ্ঠার হলেও যেকোন ধূমপায়ী এটি মাত্র একবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলে পাঠকের মনের পরিবর্তন আশা করা যায়।

মানুষের অভ্যাস সম্পর্কে মাওলানা সাহেব বলেন-

অভ্যাস দু’রকমের: কু-অভ্যাস এবং সু-অভ্যাস। অভ্যাস অভ্যাস থেকে জন্ম নেয় না। এটা সৃষ্টি হয় কয়েকটি কারণে । অভ্যাস তা সে সু-ই হােক আর কু-ই হােক মানুষের ভিতরে হঠাৎ করে একদিনে শিকড় গজিয়ে বসে না। এর সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে। লতার মত নিরবে বেয়ে ওঠার মত। কু-অভ্যাস সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে প্রধানত কয়েকটি – বংশগতভাবে, কু- সঙ্গে, কু-চিন্তায় এবং জ্ঞানের অজীর্ণতায় ও প্রবৃত্তির তাড়নাকে আয়ত্ত্বাধীন করতে না পারায় ও পারিপার্শ্বিকতায় অভ্যাস সৃষ্টির পিছনে কত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে তা মাওলানা সাহেবের এ লেখনীটি পাঠ না করলে এত সহজে অনুধাবন করা খুবই দূরহ হতাে। ঠিক এমনিভাবেই তিনি ধূমপায়ীদের ধূমপিপাসার কু-অভ্যাসকে সু-অভ্যাসে পরিণত করার প্রয়াস পেয়েছেন।

 

অভিজ্ঞ ধূমপায়ীদের নিকট কিছু শব্দ খুবই জনপ্রিয় যেমন : যমটান ও সুখটান’। এ যমটান’ ও ‘সুখটান’ এর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে মাওলানা সাহেব বলেন-

“সােয়া টানে বিড়ি খাও

দ্রুত বেগে গােরে যাও।

ধূমপানের অপচয়ের আলােচনায় তিনি বলেন, ধূমপানে অনেক বড় বড় ক্ষতির মধ্যে আর্থিক ক্ষতিটাও কম নয়, প্রতিটি অপচয়কারীই শয়তানের ভাই । যে জিনিসে কোন উপকার নেই শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি, বুঝে শুনে তা করা একটা বিরাট বােকামী ছাড়া আর কি? লােকে বলে ধূমের পয়সা মানে সিগারেটের পয়সা নাকি ভূতে জোগায়। এমনি ভাত পায় না। স্ত্রীর পরনের কাপড় নেই। ধূমপানের বেলায় টনটনে। প্রতিদিন ১৫টি সিগারেট পান করলে প্রতিমাসে ৪৫০ টি সিগারেট হয় এবং বছরে হয় ৫৪০০ টি। বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়লে অথবা মেজাজ চড়ে গেলে সিগারেট যে কয়টা যায় তারতাে সীমাই থাকেনা। এভাবে ১২ বছরে সিগারেটের সংখ্যা দাড়ায় ৬৪,৮০০ টি এবং সস্তা দামের সিগারেটের মূল্য ধরলে কত হয় তা আমি ঠিক জানিনা। এভাবে পঞ্চাশ বছর সিগারেট পান না। করলে একটা গরীব মানুষ এ পয়সা দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারতাে। ছােট ক্ষতিকে ছােট যে ভাবে, সে অনেক বড় লাভ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর ৫৪০০ বার যদি ফুসফুসকে আঘাত করা যায়, বেচারা কেমন করে ভাল থাকবে। ধূমপানে শুধু ধূমের উপকরণ যােগাতে যে পয়সা ক্ষতি হয় তা-ই না বরং যে অসুখ সৃষ্টি হয় এবং তা চিকিৎসা করতে যে পয়সা লাগে এ খরচটাওতাে ধূমপানে খরচের সঙ্গেই যােগ দিতে হবে। এছাড়া মুরুব্বির আড়ালে গিয়ে ধূমপান করতে যে সময় ব্যয় হয় সেটাও জীবনের অপচয় সময় বলে গণ্য করতে হয়। ধূমপায়ীদের সবচেয়ে বড় বিপদ হয় মুরুব্বির সঙ্গে কোথাও অবস্থানকালে মুরুব্বি সাহেব পথটা ছাড়েনও না ধূমটা পান করাও যায় না। কি বিপদই না হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কোন নৌকায় বা যানে মুরুব্বির সন্নিকটবর্তী হয়ে বসলে ধূমপায়ীর কি যে বিপদ হয়। ওদিকে ধুমপান করতে না পারায় পেট ফুলে যায় ।

এদিকে মুরুব্বি তাে চেয়ে থাকে তখন মনে হয় মুরুব্বিটা সরলেই বাঁচতাম বা কোথাও দৌড়ে পালিয়ে সিগারেটে একটা দম দিতে পারলে বাচতাম।

সারকথা

মাওলানা সাহেব এ কিতাবের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন কি উপায়ে ধূমপান করলে কোন ক্ষতি হয়না এবং কিভাবে ধূমপান ত্যাগ করা যায় তার একটি অব্যর্থ উপায় বলেছেন। ক্ষতি না হওয়ার উপায় শিখতে যেয়ে অনেক অভিজ্ঞ ধূমপায়ী ধূমপানের অভিশাপ থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করেছেন এমন অসংখ্য প্রমাণ। পাওয়া যায়।

নামকরণের সার্থকতা

মাওলানা সাহেব গ্রন্থটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধূমপিপাসাকে একটি কুঅভ্যাস হিসেবে প্রমাণ করেছেন এবং কিভাবে ধূমপান মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক নাশ অর্থাৎ সর্বনাশ করে তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা তুলে ধরে ধূমপায়ীকে সে সর্বনাশ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং কিতাবটি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিকট সাদরে গৃহীত হওয়ায় এর নামকরণ ‘ধূম পিপাসা সর্বনাশা যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে।

প্রচ্ছদ পরিচিতি

প্রচ্ছদ পরিকল্পনাটি করেন মাওলানা সাহেবের বড় সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেবের একমাত্র সহেবজাদা এবং প্রধান খলিফা ও মাওলানা সাহেবের স্নেহধন্য নাতী মুহাম্মাদ মিক্বদাদ সিদ্দিকী । পরিকল্পনাটিতে তিনি বেশ কয়েকটি সিগারেটের ভয়ঙ্কর আগুন থেকে নির্গত ধােয়া কিভাবে ধূমপায়ীর ফুসফুসকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে যা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং বাম পাশে কিভাবে চারটি ফুসফুসের আটশত কোটি ছাকনি ব্যবহার করে ধূমপান করা যায় তা ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রচ্ছদটি মুহাম্মাদ মিক্বদাদ সিদ্দিকী সাহেবের পরিকল্পনায় প্রকৌশলী মুহাম্মাদ রিয়াজুল হক অংকন করেছেন।

 

বিস্তারিত জানতে ‘‘ জীবন দর্শন ও তাসাউফ চর্চা ‘’ কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইলো।  রচনা ও সংকলন করেছেন- গবেষক মো: সেলিম-উল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব ।  যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.ফিল. ডিগ্রী লাভ করেন । 

 

 

Lorem Ipsum

Designed by Mohd Nassir Uddin