• Sunrise At: 6:37 AM
  • Sunset At: 5:18 PM
info@talimeislam.com +88 01975539999

নারী ও শিশুদের উদ্দেশে…দুআর প্রতি মনোযোগী হই

 

নারী ও শিশুদের উদ্দেশে…
দুআর প্রতি মনোযোগী হই

আমার প্রিয় বোন ও স্নেহের শিশুরা! যদি সমূহ কল্যাণে ধন্য হতে চাও এবং সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে বাঁচতে চাও, তাহলে সবসময় দুআ কর।

সময়টা বড় বিপদজনক। কারো চেষ্টায় এ সময়ের ফিতনা ও বিপদ থেকে বাঁচা অসম্ভব। সুতরাং তোমরা দুআর প্রতি যত্নবান হও, দুআ থেকে গাফেল হয়ো না।

বিপদ আসার আগেই দুআ করতে থাকা উত্তম। জানা নেই, কখন কী বিপদ চলে আসে, কে বিপদের সম্মুখীন হয়! মসীবত কাউকে বলে আসে না। তাই সকল মসীবত থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও।

ধ্বংসশীল দুনিয়া নিয়ে গর্ব করো না। দুনিয়া শান্তির জায়গা নয়; কখনো আশা দেয়, কখনো নিরাশ করে। এর ভালবাসাও আশ্চর্যজনক এবং এর শত্রুতাও বৈচিত্র্যপূর্ণ। সুতরাং তোমরা সতর্ক হয়ে যাও। কাউকে যেন সে ধোঁকায় ফেলতে না পারে। এর চক্রান্ত থেকে বাঁচ!

এটা এমন এক ভয়ের জায়গা যে, সব দিকে চোর-ডাকাত এবং হিংস্রতা ছড়িয়ে আছে। কখন কার উপর হামলে পড়বে, বলা যায় না। এই অবস্থায় কীভাবে নিশ্চিন্ত ও নির্লিপ্ত থাকা যায়? দুআ ছাড়া এ থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। যদি কখনো শান্তি লাভ হয় তাহলে শোকর কর এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ মনে কর।

যদি তোমরা সর্বদা দুআ করতে থাক তবে তিনি তোমাদের বিপদ সহজ করে দেবেন এবং তোমাদের সঙ্গে থাকবেন। বিপদে-আপদে এর চেয়ে বেশি কী চাই যে, নিজের মালিকই সাথে থাকবেন! সব কল্যাণ দুআর মাঝে মনে কর এবং দুআর অভ্যাস কর। সমস্ত জরুরত এবং কাজের উপর আল্লাহ পাকের হুকুম এবং তাঁর নিকট প্রার্থনা করাকে প্রাধান্য দাও এবং এতেই সফলতা মনে কর।

আমারস স্নেহের শিশুরা! যদি নিজে নিজে দুআ করতে না পার তাহলে ‘আলহিযবুল আযম’ পড়ে নাও। এটি অনেক উত্তম দুআ। এই দুআগুলো দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য উত্তম দুআ। মোটকথা, দুআ অত্যন্ত জরুরি আমল। এখন তোমাদের যার পক্ষে যখন, যেভাবে দুআ করা সম্ভব, কর। নিজের জীবনকে আল্লাহর হেফাযতে রাখ।

প্রথমে সুস্থতার জন্য দুআ কর। জীবনের ভিত্তি হল সুস্থতা। বিশেষ বিশেষ সময়ে অত্যন্ত কাকুতি-মিনতির সাথে সমস্ত রোগ-ব্যাধি থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। কেননা অনেক রোগ এমন আছে, যার কারণে সকলে তোমার থেকে দূরে সরে যাবে, কেউ তোমার পাশে থাকবে না। যেমন কুষ্ঠ, মৃগী, শ্বেত এরকম আরো যত রোগ আছে, যেগুলোর কারণে লোকেরা তোমার থেকে দূরে সরে যাবে।

اللهُمّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الْأُمُورِ كُلِّهَا، وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدّنْيَا، وَعَذَابِ الْآخِرَةِ.

হে আল্লাহ! আমাদের সকল কাজের পরিণাম সুন্দর করে দিন এবং আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

আল্লাহ তাআলা এমন বিপদ না দিন, যা সর্বদা লেগেই থাকে এবং অন্তর ও মস্তিষ্ক বেকার হয়ে যায়- সবসময় এই দুআ করা।

আর অসৎ সন্তান রোগ-ব্যাধি থেকেও মারাত্মক। অসৎ সন্তান অনেক বড় অসুস্থতা। এরকম সন্তানের চেয়ে সন্তান না থাকাই শ্রেয়।

তোমরা দুআ কর, তোমাদের সন্তান যেন নেক, খোশনসীব এবং তোমাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক হয় এবং সমস্ত দোষত্রুটি থেকে নিরাপদ থাকে। যদি সন্তানের তরবিয়তের পদ্ধতি তোমাদের জানা না থাকে তাহলে দুআ কর, যেন সন্তান লাঞ্ছনা এবং মসীবত থেকে বাঁচে।

তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ কী অবস্থা! সন্তানদের মধ্যে এমন সব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা মসীবত ও ধ্বংসের কারণ। জলদি সতর্ক হও। এ সময়টা গাফেল থাকার নয়। তাদের  ইসলাহ ও তরবিয়ত কর এবং তাদের জন্য দুআ কর। মা-বাবার দুআ সন্তানের জন্য অবশ্যই কবুল হয়। সেই লোকই ভাগ্যবান, যার সন্তান সৎ ও আদর্শবান।

সন্তানের কল্যাণ তোমাদেরই কল্যাণ। যদি তারা নেক হয়, দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জন করে তাহলে তোমাদেরই হৃদয় শীতল হবে। দুনিয়া জান্নাতের নমুনা হবে। আরামের সাথে জিন্দেগী কাটবে। তোমরা বেশি বেশি দুআ কর। নিজের জন্য, সন্তানের জন্য। এখন যে ফেতনা-ফাসাদ দেখছ, সব কিয়ামতের আলামত।

এখন দুআর দ্বারা কাজ উদ্ধার কর। যেন ধ্বংস না হও। সন্তান খারাপ হওয়া বিরাট মুসীবত এবং ধ্বংসের কারণ। আল্লাহ পাক শত্রুকেও অবাধ্য সন্তান দান না করুন! সন্তানের জন্য দুআর চেয়ে উপকারী কিছু নেই। এটা তার হক। ব্যস, কাকুতি-মিনতি করে দুআ কর এবং তাঁর কাছে চাইতে থাক। এভাবে যারা চাইতে পারে, তাদের আল্লাহ মাহরূম করেন না।

(হে আমার সন্তানেরা!) আমি আমার সমস্ত সময় তোমাদের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছি। সর্বদাই তোমাদের জন্য দুআ করছি এবং তোমাদের কল্যাণ-প্রচেষ্টায় নিজের জীবনকে কঠিন করে দিয়েছি; যেন তোমরা ধ্বংস ও বরবাদ না হও। আমার উপর যে দায়িত্ব ছিল তা আমি আদায় করেছি। বাকিটা আল্লাহর হাওয়ালা।  তোমরাও তোমাদের দুআ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করো না। আল্লাহর কাছে চাও, তিনি যেন সব বিপদ থেকে হেফাজতে রাখেন এবং উত্তম সন্তান দান করেন।

মুনাজাত :

ইয়া আরহামার রাহিমীন! আপনার দয়ার গুণে এখনকার চেয়ে বেশি খতরনাক সময় আমাদের দেখাবেন না। আমি ঐ সময় থেকে পানাহ চাই। আমাকে, আমার সন্তানদেরকে এবং সমস্ত মুসলমানদের বাঁচান। আমার বার্ধক্যের উপর দয়া করুন।

ইয়া আরহামার রাহিমীন! আমাকে এবং আমার সন্তানদেরকে ইসলামের উপর অটল রাখুন এবং সমস্ত ফিৎনা থেকে হেফাযত করুন।

ইয়া আরহামার রাহিমীন! যেসমস্ত কাজ এবং রোগ-ব্যাধি এবং মসীবতকে ভয় পাই সেগুলো থেকে আমার সমস্ত আওলাদ এবং তাদের আওলাদ এবং সকলকে হেফাযতে রাখুন। কারো উপর সামান্য প্রভাবও যেন না পড়ে। যদি ভাগ্যে কোনো খারাবী থাকে তাহলে সেটা আপনার কুদরত দ্বারা মিটিয়ে দিন, যেই কুদরত দ্বারা আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং যখন চাইবেন ধ্বংস করে দেবেন। সবকিছুই আপনার কুদরতের অধীন।

ইয়া আরহামার রাহিমীন! সমস্ত মসীবতের উপর আমাদের দুআকে গালেব করে দিন।

ইয়া আরহামার রাহিমীন! এদের ভুলত্রুটির উপর দৃষ্টি না দিয়ে তাদেরকে আপনার ক্রোধ থেকে বাঁচান। তাদের উপর কোনো মসীবত যেন না আসে এবং তাদের সমস্ত ধ্বংসাত্মক বিপদ থেকে বাঁচান। আগুনে পুড়ে যাওয়া, পানিতে ডুবা এবং ঐসকল বিপদ থেকে রক্ষা করুন, যেগুলোর আশংকা করি এবং ঐসকল চিন্তা-পেরেশানী থেকে মুক্ত রাখুন, যার উপর তারা ধৈর্য ধরতে পারবে না। তাদেরকে ঐসমস্ত চিন্তা-চেতনা থেকে রক্ষা করুন, যা তাদের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়।

আমাদের সন্তানদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। আপনি তো সবাইকে বাঁচান, সবার খবর রাখেন, আপনি ছাড়া তাদের আর কারো মুখাপেক্ষী করবেন না। তাদেরকে সম্মান-সম্পদ দিয়ে লাঞ্ছিত করবেন না। সম্পদ দেবার পর দরিদ্র করবেন না। তাদেরকে হেদায়েত দানের পর গোমরাহীতে লিপ্ত করবেন না। আপনার মাখলুকের সামনে তাদের লজ্জায় ফেলবেন না। তাদেরকে হিংসা-অহংকার, লোভ-লালসা এবং ফাসাদ থেকে পবিত্র রাখুন। কারণ, এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।

তাদের মাঝে যে দোষ আছে তা দূর করে দিন। এর পরিবর্তে তাদেরকে নেক গুণাবলি দান করুন; যাতে তারা সফলকাম হয়। নিজ দয়ায় তাদেরকে সব ধরনের সৌন্দর্য দান করুন। তারা যদি অসৎ হয় তাদেরকে সৎ বানিয়ে দিন। দরিদ্র হলে ধনী করে দিন, ঋণগ্রস্ত হলে তা আদায় করে দিন।

আপনি দয়াবান, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করুন, যেন আরামের সাথে জীবন কাটাতে পারে।

ইয়া আরহামার রাহিমীন! দুআর প্রভাব যেন এমন হয় যে, যেসব কল্যাণ থেকে তারা বঞ্চিত- সব তারা পেয়ে যায়। ঐ রহমত তাদের উপর নাযিল করুন, যা পূর্বে নাযিল করতেন- আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

 সংগৃহীতঃ [ লেখিকাঃ হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর আম্মা মুহতারামা খাইরুন নেসা রাহ. ]

 

 

Lorem Ipsum

Designed by Mohd Nassir Uddin