বিয়ে একটি গুরুত্ত্ব পূর্ণ ইবাদত আল-হাদিসের আলোকে
বিয়ের নির্দেশ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবী স. বলেন: কুমারিত্ব ও অবিবাহিত নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের কোন নিয়ম ইসলামে নেই। (মুসনাদ আহমদ)
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: বিয়ে করা আমার আদর্শ ও স্থায়ী নীতি, যে আমার এ সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। (ইবনে মাজা)
বিয়ের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: হে যুব সমাজ- তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী, যৌন অঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোযা রাখে, যেহেতু রোযা হবে তার ঢাল স্বরূপ। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ )
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: দু’জন প্রেমিকের মাঝে ভালবাসাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিয়ের চেয়ে শক্তিশালী আর কোন মাধ্যম আমি দেখি নাই। (ইবনে মাজা)
বিয়েতে অনুমতি
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন বিয়ে বৈধ হবে না। ( আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাযা )
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: নারী অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত যে বিয়ে করে ঐ বিয়ে বাতিল, ঐ বিয়ে বাতিল, ঐ বিয়ে বাতিল। (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)
বিয়েতে সম্মতি
নবী স. যেমন অভিভাবকের অনুমতি ব্যাতীত বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন, তেমনিভাবে অভিভাবককে নারীর অসন্তুষ্টিতে বিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন।
এক কুমারী মেয়ে রাসুলুল্লাহ স. এর নিকট এসে অভিযোগ করল যে তার পিতা তাকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিয়েছে যাকে সে অপছন্দ করে,
রাসুলুল্লাহ স. তাকে ইখতিয়ার দিলেন যে যদি তুমি চাও তাহলে এ বিয়ে বন্ধনে তুমি থাকতে পার, আর যদি তা তোমার অপছন্দ হয় তাহলে তুমি এ বিয়ে বন্ধন ছিন্নও করতে পার। (আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা)
বিয়ের প্রস্তাব
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট, এমন ব্যক্তি তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দিলে তখন তার সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও, যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী শরীফ)
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেউই তার ভাইয়ের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবের উপর নতুন প্রস্তাব দেবে না-যতক্ষণ না সে বিয়ে করে ফেলে অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
বিয়ের জন্য কনে দেখা
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: তোমরা যখন কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে তখন তাকে নিজ চোখে দেখে তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করে নিতে অবশ্যই চেষ্টা করবে, ঠিক কোন আকর্ষণে তাকে বিয়ে করবে তা যেন তারা স্পষ্ট বুঝতে পারে।
(আবু দাউদ শরীফ )
বিয়ের প্রচার
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর এবং সাধারণত এর অনুষ্ঠান মসজিদে সম্পন্ন কর, আর এ সময় বাদ্য (দফ) বাজাও। (তিরমিযী শরীফ)
রাসূলুল্লাহ স. স্ত্রীদের মোহরের পরিমান
আয়শা (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হল, যে রাসূল স. এর স্ত্রীগণের মোহরের পরিমান কি ছিল? তিনি বললেন: বার উকিয়া এবং এক নশ, এরপর আয়শা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি জান নশ কতটুকু? আবুসালামা বলল: না। আয়শা (রা.) বললেন: আধা উকিয়া অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ স. এর স্ত্রীগণের মোহর ছিল সাড়ে বার উকিয়া। সাড়ে বার উকিয়া বর্তমান সময়ে আনুমানিক (একটিমত) ১৭০০ গ্রাম রূপার সমান।
ওলিমা
আনাস (রা:) থেকে বর্নিত, নবী স. আবদুর রহমান বিন আউফ (রা:) এর গায়ে হলুদের রং দেখতে পেলেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটা কি? সে বলল: আমি এক মেয়েকে এক টুকরো স্বর্ণ মোহর ধার্য করে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন: আল্লাহ তোমার কাজে বরকত দিন, একটি বকরীর মাধ্যমে হলেও ওলিমা কর। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
ওলিমা
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: যে ওলিমায় কেবল ধনীদের দাওয়াত দেয়া হয় এবং গরীবদেরকে উপেক্ষা করা হয়; আর যে ব্যক্তি ওলিমার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানী করলো। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
বিয়ের পূর্বে বৈধ শর্তসমূহ পূরণ
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: অভিভাবক, মোহর এবং দু’জন ন্যায়পরায়ন সাক্ষী ব্যতীত বিয়ে বৈধ হবে না। (বাইহাকী)
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন, যে সমস্ত শর্তের ভিত্তিতে তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল করেছ ঐ সমস্ত শর্ত পূরণ করা অন্যান্য শর্তের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদীসের আলোকে বিয়ের দু‘আ
বর কনের জন্য দু’আ
বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা ‘আলাইকুমা- ওয়া জামা’আ বাইনাকুমা ফী খাইর আল্লাহ তোমাকে কল্যাণে রাখুন এবং তোমাদের প্রতি বরকত নাযিল করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণের ব্যাপারে একমত রাখুন। (আবু দাউদ শরীফ)
স্ত্রীর জন্য স্বামীর দু’আ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা- ওয়া খাইরা মা- জাবালতাহা আলাইহ্। ওয়া আউযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা- জাবালতাহা- আলাইহ্।
হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে তার কল্যাণকারিতা এবং তার সত্তার অন্তর্নিহিত কল্যাণকামনা করছি এবং আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তার অনিষ্টকারিতা এবং তার সত্তার মন্দ অভ্যাসগুলো থেকে। (আবু দাউদ শরীফ)
সর্বোত্তম বিয়ে
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: সর্বোত্তম বিয়ে হল যা সহজ ভাবে হয় । তাকওয়ার পর সব চেয়ে কল্যাণকর পুজি হলো স্ত্রী। (হাকিম)
আল হাদীসের আলোকে স্বামী স্ত্রীর গুণাবলী ও অধিকার
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ণ ঈমানদার তারা, যারা চরিত্রের দিক থেকে সর্বোত্তম, আর তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম। (তিরমিযী শরীফ)
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: পৃথিবী একটি সম্পদ, আর পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হল সকর্মশীল নারী। (মুসলিম শরীফ)
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: কোন মুমিন স্বামী তার মুমিন স্ত্রীকে অপছন্দ করবে না, স্ত্রীর কোন আচরণ যদি অপছন্দনীয় হয়, তাহলে অপরটি পছন্দনীয় হবে। (মুসলিম শরীফ)
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন:
চারটি জিনিস সুভাগ্যের নিদর্শন
(১) সকর্মশীল স্ত্রী (২) প্রশস্ত ঘর (৩) ভাল প্রতিবেশী (৪) ভাল যানবাহন।
চারটি জিনিস দুর্ভাগ্যের নিদর্শন
(১) অসৎ স্ত্রী (২) চাপা ঘর (৩) অসৎ প্রতিবেশী (৪) খারাপ যানবাহন।” (আহমদ, ইবনে হিব্বান)
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: ঐ স্বামীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে নফল নামায আদায় করে এবং নিজের স্ত্রীকে উঠায়,
আর সেও নফল নামায আদায় করে, যদি স্ত্রী উঠতে অলসতা করে তাহলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দিয়ে তাকে উঠায়, ঐ স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন যে রাতে উঠে নফল নামায আদায় করে এবং নিজের স্বামীকেও উঠায় এবং সেও নফল নামায আদায় করে, আর যদি সে উঠতে অলসতা করে তাহলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দিয়ে তাকে উঠায়। (আবু দাউদ শরীফ)
রাসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, পুরুষ তার
পরিবারের উপর দায়িত্বশীল, নারী তার স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানদের দায়িত্বশীল, অতএব তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং
সবাই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী শরীফ)
সংগ্রহঃ জাহিদুর রহমান