• Sunrise At: 6:40 AM
  • Sunset At: 5:21 PM
info@talimeislam.com +88 01975539999

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা সংক্ষিপ্ত আলোচনা

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (রহ.) কর্তৃক লিখিত গ্রন্থসমূহের পরিচিতি ও পর্যালোচনাঃ

যুগে যুগে যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক দিকপালগণ তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে যুগ থেকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় গাড়োমী বিদুরিত করেছেন। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি অধ্যাপক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেবের আল কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর আলোকে গবেষণামূলক, আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখনীর ক্ষেত্রেও। মাওলানা সাহেবের লেখনীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি আল-কুরআনুল কারীম ও সুন্নাহর বিধানকে বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে বিজ্ঞানের নির্যাস দিয়ে সুরভী ছড়িয়েছেন। যা সকল ধর্মের মানুষের নিকট সাদরে গৃহীত হয়েছে। আমরা এ অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকী রহ. সাহেব তাঁর জীবদ্দশায় নিম্নলিখিত আটখানা কিতাব রচনা করেন; যা তাঁর সুযোগ্য সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা মুফতি ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব কর্তৃক প্রকাশিত হয়।

১. বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা

২. তারানায়ে জান্নাত

৩. মহাস্বপ্ন।

৪. জীবন রহস্য ও দেহতত্ত্ব।

৫. মা’রেফতের ভেদতত্ত্ব

৬. ধূম পিপাসা সর্বনাশা

৭. মহা ভাবনা

৮. পীর ধরার অকাট্য দলিল

 

 নিম্নে গ্রন্থ সমূহের বিস্তারিত পরিচিতি ও পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলে

১. বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা

সংক্ষিপ্ত আলোচনা

১৯৭৪ইং সালে মাওলানা সাহেব বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা’ নামক কিতাবটি রচনা করেন। এটি তাঁর লিখিত সর্বপ্রথম কিতাব। এ কিতাবে তিনি নারী ও পুরুষের শালীনতা, ভদ্রতা ও সুখী জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। খুব সম্ভবত, এটিই বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরের দৃষ্টিতে আল-কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফের বিধান ‘পর্দা বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম কিতাব। মহান আল্লাহপাক তাঁর ওলীগণকে যে যুগে প্রেরণ করেন সেই যুগের সর্বদিকের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দ্বারা তাঁর ক্বালব আলোকিত করেন তার প্রমাণ রাখে মাওলানা সাহেবের বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা কিতাবটি। কারণ, তিনি মাদরাসা ও মানবিক বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও গবেষণা বিজ্ঞানের (Research Science) অতিসূক্ষ্ম বিভাগ দর্শন (Philosophy), মনোবিজ্ঞান (Psychology) ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের (Medical Science) আলোকে পর্দার উপকারিতা ও বেপর্দার বিষক্রিয়া তুলে ধরেছেন।

কিতাবের শুরুতেই তিনি বলেন,

“মেয়েলোক কিন্তু কম নয়,

যার পেটে মানুষ হয়।

এ কথার মাধ্যমে তিনি নারীর মর্যাদা সম্পর্কে সূধী পাঠক মহলকে সজাগ করেন। আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর পূর্বে এবং বর্তমানেও আমাদের সমাজে অধিকাংশ পরিবারে নারীরা অবহেলা, অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের স্বীকার হয়। তাই তিনি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নারীর প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মানের কথা এবং সাথে সাথে নারী-পুরুষ উভয়ের কিছু পারিবারিক দূবর্লতাও উল্লেখ করেছেন। যেগুলোর দিকে  স্বামী-স্ত্রী দৃষ্টিপাত করলে খুব সহজেই পারিবারিক অশান্তি দূর হয়ে সূখী জীবন যাপন করা সম্ভব।

তারপরই মাওলানা সাহেব মানুষের চক্ষু, কর্ণ ও মস্তিষ্কের অপব্যবহার কিভাবে মানুষকে তার নিজের অজান্তেই ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে দেয় তার বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, এ দুনিয়ায় নারী-পুরুষের যত অবৈধ ব্যাপার ঘটেছে, তার মূলে রয়েছে চোখ। যদিও দেখতে ছোট কিন্তু অতি ক্ষুদ্র আকারে এ জিনিসটি সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিল, মজনুর কপাল থেকে বাদশাহী কেড়ে নিয়েছিল এবং ট্রয় নগরীকে ধ্বংস করেছিল।

কিভাবে নিজের স্ত্রী নিজের অজান্তে এবং নিজের স্বামী নিজের অজান্তেই বেপর্দার ভয়ংকর থাবায় অতি সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করে এ প্রসঙ্গে তিনি কাব্যিক ভাষায় রশিক জ্ঞান দান করে বলেন,

“পরের বাড়ীর পিঠা, খাইতে লাগে মিঠা

পরের হাতের পান, খাইলে আসে গান ”

আমরা উপরের দুটি লাইন গবেষণা করলে দেখতে পাই মাওলানা সাহেব মুলত মনস্তত্ব বিদ্যার জটিল বিষয়কে পাঠকের মানসপটে ফুটিয়ে তুলে নারী-পুরুষ উভয়কে সর্তক করেছেন। সাধারণত অনেক সত্য এবং ভাল কথাও উপস্থাপনের ভঙ্গির কারণে মানুষ মানতে চায় না বা গুরুত্ব দেয় না। কাজেই কাব্যিক ভাবটি থেকে আমরা মাওলানা সাহেবের অতি উচ্চ উপস্থাপন ভঙ্গি অনুধাবন করতে পারি।

বেপর্দা নারী যখন অশালীন পোশাকক পরে বা উগ্র আধুনিকা হয়ে সমাজে বিচরণ করে এবং সমাজের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মানুষের কু-দৃষ্টি তার দেহে নিক্ষিপ্ত হয়। তখন ঐ নারীর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক বিভিন্ন জটিল সমস্যা বা বর্তমানে ইভটিজিং ছাড়াও আরও নানাবিধ ফিৎনার সম্মুখিন হয়ে সারা জীবন অশান্তিতে ভোগে। এ প্রসঙ্গে মাওলানা সাহেব চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে প্রমাণ করে বলেন, উচ্ছঙ্খল বেপর্দা নারীর সন্তান অনেক কাল্পনিক পিতার স্বভাব নিয়ে  জন্মগ্রহণ করে এবং আসল পিতাকে মর্যাদা দিতে জানে না, মাতা তো ঝি চাকরাণি হয়েই থাকে।

তারপর তিনি পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আবারও কাব্যিক ছন্দে বলেন,

“টাকা রাখলে ব্যাংকেতে

নিতে পারে কোন ডাকাতে ?

ফেলে রাখলে ঘাটে পথে

সাধু কয়জনা পাওয়া যায়।

কি না হইল বেপর্দায় ”

উপরের পংক্তিগুলোর মাধ্যমে মাওলানা সাহেব সুধী পাঠক মহলকে বুঝাতে চেয়েছেন, টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত থেকে অনেক বেশী মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে। ঘরের স্ত্রী, সন্তান। তাই টাকা যেভাবে অনেক সর্তকতার সাথে যত্ন করে রাখতে হয় ঠিক এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী যত্ন করে সর্তকভাবে স্ত্রী সন্তানকে রাখা স্বামী অথবা পিতার কর্তব্য।

যাদের স্ত্রী কথা শুনে না বা বেপর্দা চলাফেরা করে তাদেরকে কিভাবে খুব সহজে পর্দা করানো যায় সে প্রসঙ্গে ১৪টি উপায় লিখে দিয়ে বলেন’ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য করতে না পারলে সংসার একটা সং হয়ে দাঁড়ায়, তাতে কোনই সার থাকে।

তারপর আদর্শ চরিত্রগঠনের কিছু উপায় এবং পুরুষের বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যার চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

কিতাবের শেষের দিকে মাওলানা সাহেব লম্বা জামা বা জুব্বা পরিধানের উপকারিতা চিকিৎসাবিজ্ঞানের (Medical Science) এর আলোকে সঠিক যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মটর সাইকেল যে ইঞ্জিনিয়ার সৃষ্টি করেন তিনিই তো সবচেয়ে ভাল জানেন, কোন ভাবে চালালে বা হিফাজত করে রাখলে সাইকেল বেশীদিন টিকবে। যিনি সাইকেল কিনে চড়েন, তিনি কি সাইকেল সম্বকে ভাল জানেন ? আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সাইকেল সৃষ্টি করেছেন। আপনার দেহ সাইকেলটা কার নির্দেশমত চালালে ভাল চলবে এবং দীর্ঘায়ু হবে বলে মনে করেন ? কাজেই মৌলভী সাহেবরা লম্বা জামা পরে বেশী বুদ্ধিরই পরিচয় দেন।

সারকথা

সমাজের নর-নারীকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য ও চরিত্রবান আদর্শ নর-নারীর সুশৃংখল জীবন পরিচালনার দিক নির্দেশনা হিসেবে মনোবিজ্ঞানের আলোকে সমাজকে উপহার দিয়েছেন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা’ নামক গ্রন্থটি। যার ফলে নর-নারী বেপর্দার বিষাক্ত জীবন থেকে ফিরে এসে পর্দার মাধ্যমে শান্তিময় ইসলামী জীবন বেছে নিয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, গ্রন্থটি পাঠ করে অনেক হিন্দু ও খৃষ্টান মহিলারা পর্যন্ত বোরখা পরে পর্দা করা শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে গ্রন্থটি শান্তিপ্রিয় সমাজের জন্য এক অনন্য উপহার।

নামকরণের সার্থকতা

মাওলানা সাহেব গ্রন্থটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মূলত পর্দা সম্পর্কিত গবেষণামূলক আলোচনা করেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি দর্শন (Philosophy), মনোবিজ্ঞান (Psychology) ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের (Medical Science)

আলোকে পর্দার উপকারিতা ও বেপর্দার বিষক্রিয়া তুলে ধরেছেন। যার ফলে সূধী পাঠক মহল প্রতিটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা লাভ করেছে। এতে সাধারণ পাঠক ও ‘আলিমগণ বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে, যারা বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে জানতে পারতো না। বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর যুগ এবং বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিস্কার বরাবরই মানুষের নজর কেড়ে আকর্ষণ করে, তাই বিজ্ঞান’ শব্দটি সংযোজন করা খুবই যুক্তিসংগত এবং আলোচ্য কিতাবটি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিকট সাদরে গৃহীত হওয়ায় এর নামকরণ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা’ যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

প্রচ্ছদ পরিচিতি

প্রচ্ছদ পরিকল্পনাটি করেন কিতাবটির প্রকাশক, মাওলানা সাহেবের বড় সাহেবজাদা ও প্রধান খলিফা ড. মুহাম্মাদ মনজুরুল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব। পরিকল্পনাটিতে তিনি দুটি হীরা সদৃশ মূল্যবান বস্তুকে মানবদেহ হিসেবে কল্পনা করেছেন। এখানে একটি মূল্যবান হীরা খোলা মেলা রেখেছেন এবং অপরটিকে

একটি জাল সদৃশ পর্দার ভিতরে রেখেছেন। মূল্যবান হীরা দুটির পাশ থেকে লাল রংয়ের বিসাক্ত অসস্তিকর রশ্মি যা তিনি মানুষের কু-দৃষ্টি হিসেবে দেখিয়েছেন, দুটি হীরার উপরই পতিত হচ্ছে। এখানে আমরা দেখতে পাই, যে হীরাটি খোলামেলা রয়েছে এবং বেশী উজ্জ্বল হয়েছিল, বিষাক্ত রশ্মি সেটিকে বেশী

আঘাত করছে। ফলে সেটির মূল সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। এবং দ্বিতীয় হীরা যেটি পর্দার ভিতর রয়েছে সেটির গায়ে বিসাক্ত রশ্মি বা মানুষের কু-দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হচ্ছে না ফলে সেটির সৌন্দর্য এবং সুস্থতা অক্ষত রয়েছে। প্রকৌশলী মুহাম্মাদ রিয়াজুল হক প্রকাশকের পরিকল্পনায় প্রচ্ছদটি নিখুঁতভাবে অংকন

করেছেন।  

বিস্তারিত জানতে ‘‘ জীবন দর্শন ও তাসাউফ চর্চা ‘’ কিতাবটি পড়ার অনুরোধ রইলো।  রচনা ও সংকলন করেছেন- গবেষক মো: সেলিম-উল ইসলাম সিদ্দিকী সাহেব ।  যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.ফিল. ডিগ্রী লাভ করেন । 

Designed by Mohd Nassir Uddin